মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
এবার শীতে রাজধানীর মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানে কোথাও মুজিব কোট পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ গত বছরও প্রতিটি কাপড়ের দোকানের ডিসপ্লেতে ৬ বোতামের শত শত মুজিব কোট শোভা পেত। রাজধানী ঢাকার ফুটপাতের দোকানীরা জানান, এখন আর মুজিব কোট বিক্রি হয় না। ভবিষ্যতে মুজিব কোট বিক্রি হবে তেমন সম্ভাবনা নেই। তাই দোকানিদের কেউ কেউ মুজিব কোটকে বাসায় নিয়ে ‘পটি’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
ভারতের ‘নাচের পুতুল’ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১৫ বছর মুজিব কোট ছিল আদরের পোশাক। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সুশীল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী সমাজ, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন্ পেশাজীবী মুজিববাদী প্রমাণে গরমের দিনে ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রী তাপমাত্রায়ও মুজিব কোট গায়ে জড়াতেন। ৬ বোমানের হাতাবিহীন, হাইনেক, নিচে দুটি পকেট, কালো রঙের কোট সংক্ষপে এটাই মুজিব কোট। আওয়ামী লীগের শাসনামলে শীতকালে মুজিব কোট হয়ে পড়েছিল সার্বজনীন (!) পোশাক। সচিবালয়ে আমলারাও পড়তেন এই কোট। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবীর ওপর মুজিব কোট জড়ানো হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক ফ্যাশন। সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা প্রথম থেকেই মুজিবকোট এড়িয়ে চললেও সুবিধাবাদী, দালাল, তোষামোদকারী তাবেদার, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যের হোতাদের মধ্যে বেশি দাম দিয়ে মুজিব কোট বানানোর প্রতিযোগিতা হতো। পাশাপাশি গুলিস্তান, বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট, জিপিও, মতিঝিল, মহাখালিসহ বিভিন্ন ফুটপাতে মুজিব কোটের রমরমা বেচাকেনা হতো। কিন্তু এবার শীতে হঠাৎ করে যেন বাজার থেকে মুজিব কোট হারিয়ে গেছে। গত দু’দিন বঙ্গবাজার, জিরো পয়েন্টের বিপরীতে জিপিও, গুলিস্তান এলাকায় সরেজমিন ঘুর দেখা গেল ফুটপাতের দোকানগুলোতে মুজিব কোট দেখা গেল না। অথচ এসব দোকানো ব্লেজার, কোর্টের চেয়েও বেশি ঝুলে রাখা হতো ৬ বোতামের মুজিব কোট।
জিপিওর ফুটপাত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল, শীত উপলক্ষ্যে প্রচুর ব্লেজার, কোট পথের পাশের দোকানো ডিসপ্লে করে রাখা হয়েছে। কোনো দোকানেই মুজিব কোট নেই। তবে মুজিব কোটের আদলে নানা রঙের হাতাকাটা কোট ঝুলানো। নুর ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, এখন মুজিব কোটের মতোই হাতাকাটা যে সব রঙিন কোট টানানো রয়েছে; সেগুলোর কোনোটার নাম আলেম কোট, কোনোটার নাম শরকোট। এসব কোটের বিক্রি মোটামুটি। তিনি জানান, মুজিব কোটের বৈশিষ্ট হলো ৬টি বোতাম। আর আলেম কোট শরকোটে ৪ থেকে ৫টি বোতাম রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬৮ সালে আগরতলা মামলার সময় থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান হাতাকাটা কালো কোট পড়া শুরু করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে এই কোট। শেখ মুজিবের বিশেষ পোশাক ছিলো সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর ৬ বোতামের কালো কোট। যে কোটটি পরবর্তীতে ‘মুজিব কোট’ নামে বেশি পরিচিতি পায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তাকে যারা ভালোবাসতেন তারাই পরবর্তিতে এই ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার করতেন।
ভারতের নীল নকশায় ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও দলটির শরীক দল এবং সুবিধাবাদী বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই ‘মুজিব কোট’। পাশাপাশি বাকশাল আদর্শে যারা রাজনীতি করছেন তারাও এই কোটকে ব্যবহারে মনোযোগ দেন। আওয়ামী চেতনা ধারণকারীদের রাজনীতিক, আমলা, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিকদের কাছে এই কোট ধারণ করা মানেই বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার সামিল। পায়জামা-পাঞ্জাবির সাথে মুজিব কোট ছাড়াও মোটা ফ্রেমের চশমা, চুরুটের পাইপও শেখ মুজিব আইকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মুজিব কোট কি এবং কেন শেখ মুজিব এটা পরিধান করতেন? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক মুজিব কোট পরিধানকারী আওয়ামী নেতারা ও সঠিক কারণ জানেন না।
অনেকেই দাবি করেন ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের সময় মুজিব এই কোট পরিধান করেন। শেখ মুজিব নাকি বলেছিলেন, ‘আমার কোর্টের ৬টি বোতাম আমার ঘোষিত ৬ দফার প্রতীক।’ তবে স্বধীনতা ঘোষণার পূর্বে শেখ মুজিবের গায়ের কোটটি মুজিব কোট হিসেবে তেমন পরিচিতি লাভ করেনি। মুজিব কোট শুধু শেখ মুজিবের পছন্দের পোষাক ছিল না; এর নির্মাণ শৈলিতায় নাকি প্রতিফলিত হয়েছিল মুজিবীয় রাজনৈতিক চেতনা ও আদর্শ। মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশি আন্দোলন ও বিদেশি পণ্য বর্জন থেকে যেমন দেশি সুতায় বোনা মোটা কাপড় খাদির আবির্ভাব ঘটেছিল। তেমনি শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশি চেতনা, দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসা, সোজা কথায় শেখ রাজনৈতি আদর্শ মোড়ানো মুজিব কোটের আবির্ভাব ঘটেছিল। যদিও প্রায় অভিন্ন ডিজাইনের কোট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পরিধান করতেন। সেটাকে জিন্নাহ কোট বলা হতো।
দোকানে মুজিব কোট নেই কেন? জানতে চাইলে গুলিস্তান ও জিডিও’র পাশের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানান, মুজিব কোটএখন াার বিক্রি হচ্ছে না। গ্রাহক না থাকায় তারা ওই কোট ডিসপ্লে করেননি। একাধিক বিক্রেতা বলেন, যে পণ্যের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি সেই পণ্য বিক্রি করি এবং সাজিয়ে রাখি। হাসিনা পালানোর পর মুজিব কোট বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এবারের শীতে মুজিব কোট বিক্রি একেবারে শূনের কোটায়। বিক্রি হয় না বলে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে না। তবে কেউ যদি চায় তাহলে পুটলি থেকে বের করে দেখানো হয়। পাশের একজন দোকানদার বলেন, এখন আর মুজিব কোটের চাহিদা নেই। তাছাড়া এ কোট দেখলে কেউ যদি হামলা করে সে ভয়েও মুজিব কোট রাখা হয় না। আর বাস্তবতা হলো যেখান থেকে পাইকারি পণ্য কিনে আনা হয় সেখানেও মুজিব কোটের সরবরাহ করা হচ্ছে না।
জিপিও’র ফুটপাতের একজন দোকানদার জানান, সারাবছর ধরে তিনি দশ হাজার থেকে পনের হাজার মুজিব কোট বিক্রি করতেন। গত শীত মৌসুমে হাজার হাজার মুজিব কোট বিক্রি করেছেন। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে বিক্রি হতো বেশি। পৌষ-মাঘ মাসে প্রতিদিন এক দোকানেই ৩০ থেকে ৪০টি মুজিব কোট বিক্রি হতো। এখন চাহিদা না থাকায় দোকানের কয়েকটি মুজিব কোট বাসায় নিয়ে গেছেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে দেয়ার পর মুজিব কোট বিক্রি হচ্ছে না। তাই দোকানে যা ছিল বাসায় নিয়েছি। ভবিষ্যতে মুজিব কোট বিক্রি হবে এমন সম্ভাবনা নেই। তাই বাসার গৃহিনী ওই কোট ‘বাচ্চার পটি’ হিসেবে ব্যবহার করছে। পটি অর্থ হচ্ছে বাচ্চাদের মলমূত্রত্যাগ করার বিশেষ পাত্র; যেখানে টয়লেট ব্যবহারের পরিবর্তে বাচ্চার সুবিধার্থে ছোট কোন পাত্রে বসে মলমূত্রত্যাগ করে থাকে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন
কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে নজর রাখছে রাশিয়া